কী কী লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার লিভার নষ্ট হচ্ছে?

 

কী কী লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার লিভার নষ্ট হচ্ছে?


আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লিভার, পরিপাক ক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই অঙ্গ শরীরের সব বর্জ্যপদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখাই যকৃৎ বা লিভারের কাজ, কিন্তু যদি লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় তাহলে পরে  আপনার শরীরেই ফুটে উঠবে যা দেখে আপনি বুঝে নিতে পারবেন। আপনার যকৃৎ বা লিভার অসুস্থ কিনা। ফ্যাটি লিভার নীরব ঘাতক এটি শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অরগ্যান।  ফ্যাটি লিভার থেকে থাকলে সেটি ধরা পড়ে। এর বাইরে লিভারের চর্বি জমা হলে ধীরে ধীরে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। প্রথমদিকে পেটের ডান দিকে উপরে যে ফ্যাটি লিভার থাকে সে অংশে একটু একটু ব্যথা হয় ও পেটটা একটু ভারী ভারী লাগে। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথমে শুধু লিভারের চর্বি জমা থাকে, অন্য কোনো ইনজুরি হয় না। পরে বেশি চর্বি জমার ফলে। লিভারে প্রদাহ দেখা দেয়। গোপনে আপনার লিভার আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটি জেনে নিন। আর কী ভাবে লিভার সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ রাখবেন সেটাও জেনে নিন৷ তো চলুন প্রথমেই লিভার ক্ষতিগ্রস্ত কিনা বুঝবেন যে ভাবে , এক ,যদি হঠাৎ করে খাওয়াদাওয়ায় অনীহা তৈরি হয়। যদি দেখেন খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না, তাহলে বিষয়টিকে একদমই হতাশ করবেন না। কারণ এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ। তখন হতে পারে বিষয়টিকে একদমই অবহেলা করবেন না। তিন, কিছু খেলেই বমি পাচ্ছে সারাক্ষণ বমি বমি ভাব। এটি যকৃৎ বা লিভারের সমস্যার কারণে হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়েছে কিনা চিকিত্সকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিন চার, মল ও মূত্রের রং যদি হঠাৎ করে পাল্টাতে থাকে। তাহলে এখনই সাবধান হওয়া উচিত। আপনার যকৃতে কোনও সমস্যা হচ্ছে। হজমের সমস্যা হচ্ছে অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিত্সকের কাছে চলে যান পাক যদি আচমকা আপনার চোখের সাদা অংশের রং। হঠাৎ করে যদি আপনার গায়ের চামড়া কোনও জায়গায় খুব শুষ্ক হয়ে যায়। খোসা খোসা উঠতে থাকে তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। হঠাৎ আপনার পেটের নিচের অংশ অস্বাভাবিকরকম ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিন একই অবস্থা থাকে তাহলেও আপনাকে সাবধান হতে হবে।  লিভার ভাল থাকলে তা এমন সব অ্যান্টিবডি তৈরি করে যে কোনও অ্যালার্জি বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান গুলোকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে দেহ ওই অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান গুলোকে। জমা হতে থাকে এর প্রতিক্রিয়ায় আবার দেহ হিস্টামিন উৎপাদন করতে থাকে, যা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারক উপাদান গুলো দূর করতে কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত হিস্টামিন উৎপাদন হলে আবার চুলকানির ঝিমুনি এবং মাথাব্যথাও হতে পারে । স্বাস্থ্য ভালো থাকার পরও যদি আপনার নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। তাহলে বুঝবেন যে আপনার লিভারের কোনও সমস্যা আছে।  যেহেতু লিভার আমাদের শরীরের পাওয়ার হাউস, সুতরাং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের এনার্জি কমে যাবে। রোগী দুর্বল হয়ে অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠবে। আগের মতো কাজ করতে পারবে না। ক্ষুধামন্দা শুরু হবে ওজনও কমে যাবে। পরে  লিভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু করবে এবং শরীরে জন্ডিস দেখা দেবে। এক পর্যায়ে বেশিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীর হলুদ হয়ে যাবে এবং হাত পায়ে পানি চলে আসবে। অনেক সময় রক্ত বমি হয় এবং এটি আসলে লিভার সিরোসিসের লক্ষন। এরপর লিভার যদি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমরা সতর্ক না হই কিংবা চিকিৎসা না নেই সেটি লিভার ক্যানসার হতে পারে। লিভার ক্যান্সার হলে যেভাবে বুঝবেন লিভার ক্যানসার হলে লিভারে চাকা হয় লিভার বড় হয়ে যায় এবং মানুষের আয়ু দ্রুত কমতে থাকে। কিছু রোগী চিকিৎসকদের কাছে অনেক জটিলতা নিয়ে আসেন। লিভার সিরোসিস নিয়ে আসেন। আবার কিছু রোগী লিভার ক্যান্সার পর্যায়ে আসেন৷ কারও যদি হেপাটাইটিস হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এবার জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ। হ্যাঁ, লিভার প্রতিরোধের উপায় হল ওজন নিয়ন্ত্রণ করা ওজন নিয়ন্ত্রণ। করলে ফ্যাটি লিভার সম্পর্কিত যেসব রোগ আছে যেমন ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল এগুলো নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। আমরা ওজন দু ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। প্রথমত আমরা আমাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে খাবার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি যে পরিমাণ এনার্জি আমি নিচ্ছি সেই পরিমাণ এনার্জি খরচ করতে হবে। লেবুর জল নিয়মিত খান। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা লিভারকে দূষণমুক্ত করতে সাহায্য করে। তবে যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তারা একটু সাবধান থাকবেন। আর লেবু পানি সকালে পান করলে আপনার পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।  গ্রিন টি প্রতিদিন সকালে ও বিকালে এক কাপ করে গ্রিন টি পান করুন। এটি লিভার ফাংশন ঠিক করতে সহায়তা করে। গ্রিন টিতে আবার আপনি চিনি মিশিয়ে খাবেন না। তাহলে আর এর উপকার আপনি পাবেন না। আর নিয়মিত গ্রিন টি পান আপনার শরীরকে চাঙ্গা করে তুলবে , আপেল সিডার ভিনেগার, এক কাপ গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়ার আগে পান করুন। । চা চামচ আদাগুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন,  এই পানীয় টানা 15 দিন খেলে দেখবেন অনেক সুস্থ বোধ করছেন আপনি। কারণ এতে লিভারের চর্বি জমার প্রক্রিয়াটি প্রায় বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে লিভার আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করে । 


ফ্যাটি লিভার রোগ কত প্রকারের হয়?


ফ্যাটি লিভার রোগের প্রধান দুটি প্রকার রয়েছেঃ


অ-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগ (NAFLD)

এনএএফএলডি হল ফ্যাটি লিভার রোগের সবচেয়ে সাধারণ রূপ এবং এটি অ্যালকোহল সেবনের সাথে সম্পর্কিত নয়। এটি স্থূলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং বিপাকীয় লক্ষণের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত। এনএএফএলডি সাধারণ ফ্যাটি লিভার থেকে অ-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (এনএএসএইচ) নামে আরও গুরুতর আকারে অগ্রসর হতে পারে যদি প্রদাহ এবং লিভার কোষের ক্ষতি হয়।


অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগ (AFLD)

অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এ. এফ. এল. ডি হয়। যখন যকৃতে অ্যালকোহল বিপাক করা হয়, তখন এটি বিষাক্ত উপজাত তৈরি করে যা যকৃতের কোষগুলিকে ক্ষতি করতে পারে এবং চর্বি সঞ্চয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ক্রমাগত অ্যালকোহলের অপব্যবহার এ. এফ. এল. ডি-কে আরও গুরুতর লিভারের অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমন অ্যালকোহলযুক্ত হেপাটাইটিস বা সিরোসিস।


ফ্যাটি লিভার এবং অন্যান্য রোগের সাথে এর সম্পর্ক?

ফ্যাটি লিভারের অবস্থা ক্যান্সার সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, হৃদরোগ এবং করোনারি ধমনীর ব্যাধি বেশি দেখা যায়। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য সহ একটি স্বাস্থ্যকর লিপিড প্রোফাইল বজায় রাখা অপরিহার্য। উঁচু লিভার এনজাইমগুলি লিভারের প্রদাহ এবং লিভার ফাইব্রোসিসের সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। ফ্যাটি লিভার রোগ পরিচালনার জন্য জীবনধারা ব্যবস্থাপনা এবং ওজন হ্রাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


ফ্যাটি লিভার রোগ কী কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?


মূলত কিছু উপায় আমরা এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি তা হলো:

ওজন হ্রাসঃ ওজন হ্রাস ফ্যাটি লিভার রোগকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। বিরতিহীন উপবাসের মতো নিয়মগুলি ওজন হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে।

কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ হ্রাস করুনঃ কার্বোহাইড্রেট, বিশেষত পরিশোধিত শর্করার ব্যবহার হ্রাস করা ফ্যাটি লিভারের রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

ফ্রুক্টোজ গ্রহণ সীমিত করুনঃ ফ্রুক্টোজ অ্যালকোহলের মতো ফ্যাটি লিভারের রোগের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অতএব, ফলের রস এবং ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ মিষ্টি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড এবং তৈলাক্ত খাবার সীমিত করুনঃ যকৃতের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রক্রিয়াজাত এবং ভাজা খাবারে পাওয়া ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি হ্রাস করা উচিত।

অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুনঃ অ্যালকোহল সেবন সম্পূর্ণরূপে এড়ানো উচিত কারণ এটি ফ্যাটি লিভারের অবস্থার আরও ক্ষতি করতে পারে বা আরও খারাপ করতে পারে।

ওষুধের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুনঃ মেথোট্রেক্সেট এবং অ্যাসিট্রেটিনের মতো কিছু ওষুধ লিভারের ক্ষতি করতে পারে। লিভারের ক্ষতি বাড়িয়ে দিতে পারে এমন কোনও ওষুধ এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে মনোনিবেশ করুনঃ ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খান। এটি সামগ্রিক লিভারের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে এবং ফ্যাটি লিভার রোগ পরিচালনায় সহায়তা করে।

পেশাদার দিকনির্দেশনা সন্ধান করুনঃ ওজন হ্রাস কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্ত করার কথা বিবেচনা করুন বা ব্যক্তিগতকৃত দিকনির্দেশনা এবং সমর্থন পাওয়ার জন্য লিভারের স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সাথে পরামর্শ করুন।


কীভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমরা লিভারের যত্ন নিতে পারি?



লিভারের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত সংজ্ঞানময় একটি বিষয়। লিভার শরীরের অন্যত্র কাজ করার জন্য প্রধান অঙ্গ হিসেবে গণ্য হয়। একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আপনি লিভারের যত্ন নিতে পারেন:


পরিমিত মতন পানি পান: প্রতিদিন যত্ন নেওয়া যেতে প্রতিদিন যথাযথ পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এটি লিভার কে শোধন করে এবং শক্তিশালী রাখে।


স্বাস্থ্যকর খাবার: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া লিভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাজা ফল, সবজি, প্রোটিন যুক্ত খাবার, হাঁড়িয়ে পানি ইত্যাদি লিভারের যত্ন নেওয়াতে সাহায্য করে।


নির্মল ভাবে প্রদূষণ এবং ক্ষতিকর পদার্থ পরিহার করা: কারও কারও জীবনযাপন এবং পরিবেশ পরিস্থিতিতে ভাসমান বিষাক্ত পদার্থ থেকে দূরে থাকা লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। নিচের উল্লেখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:


নিয়মিত বাথরুম পরিস্কারণ

প্রাকৃতিক পরিস্থিতির সংরক্ষণ করা, উদাহরণস্বরূপ বিয়ার, রাস্তা ধোয়া করা ইত্যাদি।

নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করা লিভার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং তা সবসময় পরিচর্যা করে।


মেয়াদপূর্বক চিকিৎসা পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লিভার সুস্থ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো আছে।


উপরোক্ত পদক্ষেপ অনুসরণ করা লিভারের যত্ন নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি কোনও অস্বাভাবিক অবস্থা অনুভব করেন, অতিরিক্ত পরামর্শের জন্য নিকটস্থ চিকিত্সকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

A KUNDU

Post a Comment

Previous Post Next Post